কেফায়েত উল্লাহ মিয়াজী :
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের গোহারুয়া গ্রামের মানিকমুড়া এলাকায় বসতঘরে নামাজের বিছানা থেকে বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় রাশেদা বেগম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে রাশেদার মৃত দেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। রাশেদা ওই গ্রামের বেলজিয়াম ফারুক বাড়ির মৃত আবুল কাশেমের স্ত্রী। নিহত রাশেদার ৩ মেয়ে দাবি করেন পরিবারিক কলহের জেরে তার একমাত্র ভাই পোল্যান্ড প্রবাসী বেলাল হোসেনের শ্বশুর গোহারুয়া গ্রামের মাহবুবুল আলম কাঞ্চন এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তারা এ নৃশংস হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গোহারুয়া গ্রামের মানিকমুড়া পাড়ায় মৃত আবুল কাশেমের স্ত্রী রাশেদা বেগম তার পোল্যান্ড প্রবাসী একমাত্র পুত্র বেলাল হোসেনের স্ত্রী তাছলিমা আক্তার’সহ একই ঘরে বসবাস করতো। গত কিছুদিন যাবৎ পারিবারিক কলহের কারণে বেলালের স্ত্রী গোহারুয়া গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরিবারিক বিরোধের ঘটনায় বৃহস্পতিবার শালিস বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। বুধবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের সময় রাশেদার ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস মায়ের ফোন নাম্বারে কল দিয়ে বন্ধ দেখে পাশ্ববর্তী ঘরের মামাত বোন জোৎসনা বেগমের কাছে ফোন করলে তিনি ঘরে গিয়ে সকল বৈদ্যুতিক লাইট বন্ধ দেখতে পায়। পরে সে লাইটের সুইচ দিয়ে নামাজের বিছানায় রাশেদাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে চৎকার করলে বাড়ির লোকজন এসে রাশেদাকে উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী লাকসাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। উদ্ধারের সময় রাশেদার মাথায় মারাত্মক জখম, গলায় ওড়না পেঁচানো ও জিহবা বের হয়ে ছিল বলে দাবী প্রত্যাক্ষদর্শীদের। পরে ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস একই গ্রামে তার স্বামীর বাড়ি থেকে দৌঁড়ে এসে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশে ও জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ কল করলে পুলিশ গিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাশেদার মৃত দেহ উদ্ধার করে।
নিহতের মেয়ে বিবি হাওয়া, আয়েশা আক্তার টুম্পা ও জান্নাতুল ফেরদাউস বাবু বলেন, পারিবারিক বিরোধের কারণে আমাদের ভাই বেলালের শ্বশুর মাহবুবুল আলম কাঞ্চন দীর্ঘদিন যাবৎ মা, আমরা ও আমাদের স্বামীদেরকে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। সর্বশেষ বেলালের স্ত্রীর বিষয়ে বৃহস্পতিবার সালিশ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সালিশের একদিন পূর্বে কাঞ্চন আমার মাকে হত্যা করে পথের কাঁটা সরিয়ে দিয়ে আমাদেরকে চিরতরে এতিম করে দিয়েছে। এছাড়া হত্যাকারীরা আমার মায়ের পরিহির স্বর্ণের গহনা ও মোবইল ফোন নিয়ে যায়। আমরা এ হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করছি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এমদাদুল হক ভূঁইয়া বলেন, শুনেছি অজ্ঞাত লোকজন তাদের ঘরে প্রবেশ করে ওই নারীকে কুপিয়ে ঘরে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে।
জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছি ওই নারীকে কে-বা কাহারা হত্যা করে তার স্বর্ণ গহনা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। আমি এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।
নাঙ্গলকোট থানা অফিসার ইনচার্জ ফারুক হোসেন বলেন, লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply